যে বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ভোট দেবেন জকিগঞ্জের নতুন ভোটার

আল হাছিব তাপাদার:: শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এরপরও নিরবে থেমে নেই প্রার্থীদের শেষ চেষ্ঠা। সমর্থকরা ভিন্ন কৌশলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুনাচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। নতুন ভোটারদের টার্গেট করে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে দিচ্ছেন অঙ্গীকার। তবে নতুন ভোটাররা বলছেন আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। কোনো প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে পরতে চাই না। কর্মসংস্থান, উন্নয়ন ও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে তারুণ্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

সম্প্রতি সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন নতুন ও তারুণ ভোটারের সাথে খেলামেলা কথা বলার সময় তারা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ও তাদের প্রার্থীরা নিজ নিজ ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। অনেকে বলেছেন “মার্কা দেখে ভোট দিন, মার্কায় ভরসা রাখুন।” এ বিষয়টিতে দ্বিমত আছে। আমাদের ভাগ্য কোনো মার্কার ওপর ভরসা করে দিতে পারি না, সেটা যে মার্কাই হোক। একজন তরুণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেবে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রথমেই দেখবো নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের জন্য কী আছে, ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী কেমন, জনগনকে প্রতিশ্রুতি কি দিলেন। যোগ্যতা কতটুকু। জনগণের পাশে ছিলেন কিনা, জনগনের ও এলাকার জন্য কি করেছেন। নির্বাচিত হলে কি করবেন, কি দেবেন, সবার মৌলিক অধিকার রক্ষায় কতটুকু সক্রিয় হবেন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর সক্ষমতা কতটুকু।

প্রার্থীদের শিক্ষার দিক নিয়ে তরুণ ভোটার আরও বলেন, ভোট দেয়ার আগে যোগ্যতার মাপকাঠি গুনবো। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন। তিনি স্বশিক্ষিত হলে তার প্রভাব কতটা সমাজে পড়েছে। বিগত সময়ে তরুণদের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে ব্যক্তি হিসেবে কী আচরণ করেছেন। প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তি যদি স্বতন্ত্র হন তবে তার বিগত সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস। আর যদি দলীয় হন তবে তার দলের কর্মকাণ্ড কী ছিল, কী আছে। ভোটের আগে দলের পাশে না থাকলে নির্বাচিত হয়ে জনগনের পাশে থাকবেন কিভাবে তা বিবেচনা করে জকিগঞ্জের নবীন ও তরুণ সমাজ ভোট দেবেন এবার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মত ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, ছোটকাল থেকেই নির্বাচনের মৌসুমে প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দেখে আসছি। কিন্তু নির্বাচন আসলে কী সেটা বুঝতে শুরু করেছি কয়েক বছর ধরে। এবার আমি প্রথম ভোট দেবো। ভোট দেয়ার কথা মনে হলে উৎসব লাগছে। তবে ভোট প্রয়োগের আগে এলাকার বিগত সময়ের উন্নয়নকে মূল্যায়ন করবো। যাকে ভোট দেবো তিনি উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবেন তা বিবেচনা করবো। এরপর ভোট প্রয়োগ করবো। এতে সে প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন, আমি উন্নয়ন চাই।

একটি কোম্পানীর সেলসম্যান সাহেদ আহমদ বলেন, ২য় বারের মতে আমি ভোট দিব। এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে একবার ভোট দিয়েছি। এবার দেশের উন্নয়ন দেখে ভোট দেয়াই ভালো। গ্রামগঞ্জের উন্নয়নের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো।

উপজেলার মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা নতুন ভোটার হাসান আহমদ বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশের সর্বশেষ প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে ভোট দেবো। সরকার একদিকে আর এমপি অন্যদিকে হলে উন্নয়ন হয়না। তাই বুঝে শুনে ভোট দেবো।

পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষ ভালো থাকুক। শান্তিতে বাঁচতে চাই। যিনি নির্বাচিত হলে মামলা-হামলা করে হয়রানী করবেন না তাঁকেই ভোট দেবো। কোন প্রার্থীকে ভোট দেবো তা এখনো চূড়ান্ত করিনি। তবে স্বাধীনতার পক্ষে যাবে আমার ভোট। স

ুলতানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাজল গ্রামের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বলেন, আমি ব্যক্তি প্রার্থী নিয়ে ভাবছি না। দেশের ও সমষ্টিগত উন্নয়ন নিয়ে ভাবছি। যে দলের ইস্তেহারে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটবে সে দলকেই আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভোট দেবো।

সিলেট-৫ আসনে ২২ বছর পর মুখোমুখি হচ্ছে নৌকা-ধান
আল হাছিব তাপাদার
২২ বছর পর ৩০ ডিসেম্বর জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক। জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতীক প্রায় ২২ বছরে মুখোমুখি হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে আমেজ অন্যরকম।

জকিগঞ্জের প্রবীন কয়েকজন রাজনীতিবীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ভারতের সীমানা ঘেঁষা সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে সর্বশেষ নৌকা ও ধান প্রতীক মুখোমুখি হয়েছিলো ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার, দাড়ি পাল্লা প্রতীকে ছিলেন জামায়াত নেতা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। সে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের হাফিজ আহমদ মজমুদার বিজয়ী হন। জামানত হারান বিএনপি প্রার্থী আবুল হারিছ চৌধুরী।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট গঠনের কারণে জামায়াত আসনটি দখল করে দাড়িপাল্লা প্রতীকে ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রার্থী করে বিজয়ী হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারো জামায়াতের ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন দাড়িপাল্লা প্রতীকে বিএনপি জোটের প্রার্থী, তখন পরাজিত হন।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন অংশ না নেয়ায় জামায়াতের প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন না। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াত আসনটিতে তাদের প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীকে পেতে বিএনপি জোটের কাছে দাবী করে বসেছিলো। কিন্তু স্থানীয় বিএনপি আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থীকে মেনে নেয়নি। বিভিন্ন সময়ের জরিপের তথ্যে উঠে আসে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হাতে ধানের শীষ তুলে দিলে স্থানীয় বিএনপিতে ভাঙন দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি জোটের শরিকদল জমিয়ত আসনটিতে তাদের প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক দিতে জোর দাবী জানায়। জোট শরিকদের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে অবশেষে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে ধানের শীষের প্রার্থী করে।

অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে একক প্রার্থী থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন সাবেক দুইবারের এমপি ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার। জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন।

সাধারণ ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই এবার জমে উঠবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা সংসদ নির্বাচনে প্রায় ২২ বছর থেকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে পারছেনা। এবার ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেবার সুযোগ পেয়েছে। এ উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে নেতাকর্মীরা ধানের শীষকে বিজয়ী করতে প্রাণপণ চেষ্ঠা করবে। তবে সাবেক দুইবারের এমপি ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ভোটের মাঠে কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হবে বলে অনেকে মত দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর